বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে দেখছেন ইসির আস্থা ফিরে পাওয়ার ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ হিসেবে। তিনি মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন হারানো আস্থা ফিরে পেতে পারে।
এদিকে নিরপেক্ষ ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে এখনও সংশয়ে প্রকাশ করেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তাবিথ আউয়াল।
পরে সাংবাদিকদের তাবিথ বলেন, “একটা বিতর্কিত নির্বাচন অতীতে হয়েছে। আর বিতর্ক না বাড়িয়ে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেক অপরিষ্কার জায়গা আছে। যেখানে প্রযুক্তি এবং ক্রয় তথ্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে কিনা, এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। সন্দেহ শুধু আমাদের একার নয়, সাধারণ জনগণের অনেক প্রশ্ন আছে, তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন কিনা, তারা ভোট গণণা হবে কিনা। এ কথাগুলো ইসির কাছে তুলে ধরেছি।”
এবারের নির্বাচনকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন করার জন্য আপনারা অতীতেও দেখেছেন, আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস। নির্বাচনে যত সমস্যাই আসুক, আমরা সবগুলোকে অতিক্রম করে চেষ্টা করব, এগিয়ে যেতে। শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। তার মানে এই নয়, যে ভুলগুলো হতে যাচ্ছে, সেগুলো আগে থেকে মেনে নেব বা জনগণকেও মানতে দেব।”
গেলবার ভোটের অভিযোগ আমলে না নেওয়া ও তদন্ত না করার বিষয়টি তুলে ধরেন তাবিথ।
“এবারও আমরা বলছি, নির্বাচন যদিও সুষ্ঠু হবে না তাও আমরা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে আমরা চেষ্টা করছি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। আগামী দিনগুলোতে আমরা আবারও বলছি, ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করব। আমাদের সকলের দাবি মেনে নিয়ে অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে ইসি।”
আগামীতে সংলাপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, “গত নির্বাচনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে আমাদের একটা প্রতিবাদ ছিল। নির্বাচনটাকে আমরা বয়কট করেছিলাম, এটা ইলেকশনের দিন। আমরা চেষ্টা করেছিলাম একদম শেষ পর্যন্ত থাকতে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত এই ইলেকশনে থাকব এবং শেষটা দেখেই ছাড়ব।”
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইভিএম নিয়ে আমরা যে আশঙ্কা তুলে ধরেছি, নিশ্চয়ই ইলেকশন কমিশন আমাদের সঙ্গে বসবেন। আমরা আশাবাদী বসার মাধ্যমে আমরা কনভিন্স করতে পারব, ইভিএম ব্যবহার যেন না হয়। আগামী দিনগুলোয় সংলাপে বোঝা যাবে, ইভিএম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হয়।”
বেলা পৌনে তিনটায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তার সঙ্গে এসেছিলেন মির্জা আব্বাস, আফরোজা আব্বাস, ঢাকার সাবেক ডেপুটি মেয়র আবদুস সালাম এবং তার ভাই।
পরে ইশরাক বলেন, “এই নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ক্রান্তিকাল চলছে, কোনো গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই। এজন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সবাইকে নিয়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করব। নির্বাচনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি। আরও কিছুদিন পার হলে বলা যাবে। তখন আপনারাও দেখতে পাবেন।”
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাছে এটি দ্বিতীয় সুযোগ। গত নির্বাচন কেমন হয়েছে তা সবাই দেখেছে। তারপরও তাদের কাছে কি ধরনের আস্থা থাকতে পারে প্রার্থী হিসেবে এ প্রশ্ন আমি জাতির কাছে রাখতে চাই। যেহেতু আরও একটা সুযোগ এসেছে তাদের ভুল সংশোধনের, আমি চাইব তারা সেটা করবেন।”
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন।
Discussion about this post