ভারতের উত্তর প্রদেশের আট জেলায় শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা, শুক্রবারের জুমার নামাজের পর আবারও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সহিংসতা ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বিনজৌর, বুলন্দশহর, মুজফরনগর, আগ্রা, ফিরোজাবাদ, সম্ভল, আলিগড় ও গাজিয়াবাদে ইন্টারনেট পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে লখনউতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলেও সেখানে এই ধরণের কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি। রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা পিভি রামাশাস্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, “আমরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেছি, এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এক দিনের জন্য ৮জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপরেও আমরা নজর রাখছি”।
গত ১৯ ডিসেম্বর ও ২১ ২১ ডিসেম্বর, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, ২১ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই শরীরেই গুলির ক্ষত পাওয়া গেছে, রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে যে প্লাস্টিক ও রাবার বুলেট ছাড়া অন্য কোনো গুলি ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র বিজনৌরেই তারা প্রকাশ্যে গুলি চালায়, সেখানে ২০ বছরের এক ভাবী সিভিল সার্ভিসের মৃত্যু হয়।
পাল্টা পদক্ষেপের যুক্তিতে, একাধিক ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে রাজ্য পুলিশ, বিতর্কিত আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালীন দুজনকে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুলি চালাতে দেখা গেছে। উপমুখ্যমন্ত্রী দিনেশ শর্মা দাবি করেন, ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে পুলিশও। একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “২১ জেলায় ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার ঘটনায় ২৮৮ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬২ জন আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাত পেয়েছেন”।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীও সফলভাবে বিক্ষোভ সামাল দেওয়ায় পুলিশের প্রশংসা করেন।
যদিও বিরোধী দলের নেতারা তা মানতে রাজি নন। ট্যুইটে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী লিখেছেন, “সিএএ ও এনআরসির প্রতিবাদে চলাকালীন সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে উত্তরপ্রদেশে। এই মৃত্যুর তদন্ত করতে হবে রাজ্য সরকারকে, এবং নির্দোষ পরিবার গুলিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে”।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত দুজনের বিজনৌরের বাড়িতে গিয়েছেন কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। এমনকী, রাজ্যে মানবধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে, রাজ্য পুলিশএর ডিজিকে নোটিশ পাঠিয়েছে জাতীয় মানবধিকার কমিশন।
নাগরিত্ব আইন অনুযায়ী, এই প্রথমবার নাগরিকত্ব পাওয়ার মাপকাঠি হিসেবে ধর্মকে রাখা হয়েছে। ভারত সরকারের দাবি, মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার স্ংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিত্ব দেয়ার পথ সহজ হবে এই আইনে।
সূত্র : এনডিটিভি
Discussion about this post