গাজীপুর মহানগরীর গাছার বোর্ড বাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মহর খান ওয়াকফ্ এস্টেটের সাড়ে দশ বিঘা জমি মোতওয়াল্লির নিয়ন্ত্রণে নেই। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের ওই ওয়াকফ্ জমিতে মোতওয়াল্লিসহ ওয়াকিফের (ওয়াকফ্দাতার) কতিপয় উত্তরাধিকারী ও বিভিন্ন মহল দোকানপাট করে দখল করে রেখেছে। অথচ অর্থাভাবে এলাকার ঐতিহ্যবাহী ওয়াকফ্ এস্টেটের কেন্দ্রীয় মসজিদটি রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়।
এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গাজীপুরের ওয়াকফ্ এস্টেটগুলোর মধ্যে মহর খান ওয়াকফ্ এস্টেট অন্যতম। ওই ওয়াকফ্ এস্টেট পরিচালিত বোর্ড বাজারের বিশাল মসজিদটি এ এলাকার কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় কলমেশ্বর গ্রামের মুন্সী মহর খান ১৯৫৩ সালের ২১ মে ৯৭৭৯ নং দলিল মূলে, ১৯৫৭ সালের ২ এপ্রিল ৮৩১০ নং দলিল মূলে ও ১৯৬১ সালের ২৪ জানুয়ারি ১৯৮২ নং দলিল মূলে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাহ মাঠের জন্য সর্বমোট ৩ একর সাড়ে ৫০ শতাংশ জমি ওয়াকফ্ করেন। আশির দশকের শেষের দিকে মসজিদের দক্ষিণ পাশে ওয়াকফ্ এস্টেটের পতিত জমিতে অস্থায়ী কাঁচাবাজার গড়ে ওঠে। নব্বই দশকের শুরুতে সেখানে অস্থায়ী কিছু দোকানপাট গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময় মোতওয়াল্লিপক্ষের বাধা উপেক্ষা করে আরও দোকানপাট গড়ে উঠলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। গাজীপুর জজকোর্ট থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এসব অবৈধ দোকানপাট ভেঙে দেয়ার আদেশ দিলেও তা আজও কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি ওয়াকিফের (ওয়াকফ্দাতার) কতিপয় উত্তরসূরি জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ওয়াকফ্ জমির মালিকানা দাবিতে সেখানে পাকা ইমারত নির্মাণসহ দখলদারিত্ব চালাচ্ছেন। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা গর্ত জায়গা ভরাট করে দোকান করেছেন এবং প্রতি মাসে মোতওয়াল্লিকে ভাড়া দিতেন। কিন্তু আদালতে মামলা হওয়ায় মোতওয়াল্লি দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া উত্তোলন বন্ধ রেখেছেন। মোতওয়াল্লি নিজেও কিছু জায়গা দখল করে ব্যক্তিগতভাবে অন্যত্র ভাড়া দিয়েছেন এবং মসজিদসহ ওয়াকফ্ এস্টেটের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব না দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের ভাড়ার টাকা তসরুফ করছেন বলেও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। ওয়াকিফের এক উত্তরাধিকার রুবেল খান মন্টু বলেন, বর্তমান মোতওয়াল্লি ওয়াকফ্ প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ওয়াকফ্ দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে মোতওয়াল্লি নিযুক্ত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে মহর খান ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতওয়াল্লি গিয়াস উদ্দিন মেম্বার জানান, ওয়াকফ্ এস্টেটের জমিতে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে তুলছে। প্রথম থেকেই তারা বাধা দিয়ে এলেও দখলবাজরা কোনো কর্ণপাত করেনি। অবশেষে আদালতে দখল পুনরুদ্ধারের মোকদ্দমা দায়ের করলে আদালত ওয়াকফ্ এস্টেটের পক্ষে রায় দেন এবং অবৈধ দখলদারদেরকে নিজ নিজ খরচে তাদের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেন। আদালতের এ নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ দখলদাররা তাদের স্থাপনা অপসারণ না করে বরং আরও নতুন করে দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। ওয়াকফ্ প্রশাসন তাকে বৈধভাবেই মোতওয়াল্লি নিযুক্ত করেছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
সূত্রঃ যুগান্তর

Discussion about this post