মহাত্মা গান্ধীর দর্শনে উদ্বুগ্ধ হয়ে গুণ্ডামি ছেড়ে ‘অহিংস’ হয়ে উঠেছিলেন ‘মুন্না ভাই’ রূপী সঞ্জয় দত্ত। পিটুনি দেওয়ার বদলে প্রতিপক্ষকে গান্ধীগিরি শেখাতেন তিনি। সেটা তো বলিউডি সিনেমার গল্প। এবার ক্রিকেটেও প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে এলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মোহনদাঁস করমচাঁদ গান্ধী। সাড়ে চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বাঁ হাতি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে তিনশো রানের আবদার করেছিলেন এক ভক্ত। ভক্তের সেই অনুরোধে ওয়ার্নার সে দিন হাসলেও আজ ঠিকই ট্রিপল হাঁকিয়েছেন। তারপর ‘গান্ধীগিরি’র নমুনা দেখা যায় ওয়ার্নারের স্ত্রীর সোশ্যাল সাইটের পোস্টে! তিনি শোনান ওয়ার্নারের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
আজ শনিবার অ্যাডিলেডে ৩৩৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন বাঁহাতি অজি ওপেনার। তার ব্যাটিং দাপটে অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেটে ৫৮৯ রানে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে দেয়। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তান এখন ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই সোশ্যাল মিডিয়ায় জোনাথন নামের এক ভক্ত ওয়ার্নারের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে একটা ট্রিপল সেঞ্চুরি অন্তত করো।’ ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে হলে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় ব্যাটসম্যানকে। দাঁত কামড়ে পড়ে থাকতে হয় ক্রিজে। ওয়ার্নার ধৈর্যের ধার ধারেন না। মারমুখী ব্যাটিং করতে ভালোবাসেন। ধৈর্যের দোহাই দিয়ে সেদিন ভক্তের আবদার উড়িয়ে দিয়েছিলেন ওয়ার্নার।
অবশেষে অ্যাডিলেডে আকাশ ছুঁলেন আজ। ভেঙে গেল স্যার ডন ব্রাডম্যানের ৩৩৪ রানসহ অনেক রেকর্ড। কীভাবে তা সম্ভব হল? অজি-ওপেনারের স্ত্রী ক্যান্ডিস টুইট করে রহস্য ফাঁস করেন। মহাত্মা গান্ধীর অমর বাণী তুলে ধরে ওয়ার্নারের স্ত্রী লিখেন, ‘শারীরিক সক্ষমতা শক্তির আসল উৎস নয়। অদম্য ইচ্ছাশক্তিই শরীরে জোর এনে দেয়। বহির্জগত তোমার সম্পর্কে কী মনে করছে, তা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজের ক্ষমতায় তুমি কতটা বিশ্বাসী সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ ওয়ার্নারও দ্বিতীয় টেস্টে এই ইচ্ছা শক্তিরই পরিচয় দিয়েছেন। ধৈর্য ধরে ব্যাটিং করে গেছেন। অনেকে বলছেন, অজিরা ইনিংস ঘোষণা না করলে আজ হয়তো ব্রায়ান লারার রেকর্ডটাই ভেঙে দিতেন।
গত দেড় বছরে ওয়ার্নারের ক্রিকেট জীবনের উপর দিয়ে কম ঝড় বয়ে যায়নি। অজি ক্রিকেটারের লড়াইটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন স্ত্রী ক্যান্ডিস। তাই তিনি এমন কথা বলতে পারলেন। বল বিকৃতি কাণ্ডে জড়িয়ে এক বছরের জন্য নির্বাসিত হতে হয়েছিল ওয়ার্নারকে। নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে অ্যাশেজে ভালো কিছু করতে পারেননি। প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের মাঠে খেলতে নামলেই ওয়ার্নারের দিকে ধেয়ে এসেছে বিদ্রুপ। খুব কৌশলে সেসব সামাল দেন তিনি। অবশেষে নিজের ক্ষমতা, দক্ষতায় বিশ্বাস রেখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঝলসে উঠলেন তিনি। এই ওয়ার্নারকে ঠেকানোর কৌশল পাকিস্তানের জানা নেই। আর নিষিদ্ধ ওয়ার্নারের ঘুরে দাঁড়ানোর রহস্যটা স্ত্রী ক্যান্ডিস বলেই দিয়েছেন।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
Discussion about this post