বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের নিহত শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খাতুন মীম হত্যা মামলায় জাবালে নুর পরিবহনের দুই চালকসহ তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি দুই আসামি হেলপার এনায়েত হোসেন এবং বাস মালিক জাহাঙ্গীর আলম খালাস পেয়েছেন।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাহ, আরেক গাড়ির চালক জোবায়ের সুমন ও হেলপার আসাদ কাজী। প্রথম দুজন কারাগারে থাকলেও আসাদ পলাতক রয়েছেন।
বাসচালক ও চালকের সহকারীদের খামখেয়ালির কারণে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীসহ যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছেন। তাঁদের কবল থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। চালকদের আরও সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে চালকেরা কোনোভাবেই যাতে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাতে না পারেন, সে ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশদের আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল হতে বলেছেন আদালত।
বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার রায়ে আজ রোববার আদালত এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালত মালিকদেরও আরও দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। আদালত মনে করেন, চুক্তিতে ভাড়া দেওয়ার কারণে বাসচালক ও সহকারীদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়।
রায়ে আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ৩৭ জনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বাসচালক মাসুম বিল্লাহসহ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও অপর বাসচালক জুবায়ের সুমন জানতেন, যে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও তাঁরা সেদিন আগেভাগে যাত্রী তোলার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। আগে যাত্রী তোলার জন্য জোবায়ের সুমন তাঁর বাসটি সামনে নিয়ে গিয়ে উড়ালসড়কের ঢালে জায়গা ব্লক করে রেখেছিলেন। পেছনে থাকা বাসচালক মাসুম বিল্লাহ তখন আগে যাত্রী তোলার জন্য বাম পাশ দিয়ে গিয়ে যেখানে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকেন, সেখানে বাসটি তুলে দেন। এতে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব, দিয়া খানমসহ কয়েকজন ছাত্রী গুরুতর আহত হন।
চালকের সহকারী এনায়েত হোসেনের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, বারবারই তিনি মাসুম বিল্লাহকে দ্রুত গাড়ি না চালানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারপরও মাসুম বিল্লাহ দ্রুতগতিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাস তুলে দেন।
গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হয়।
নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)।
এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন বিচারক। এ মামলায় ৩৭ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। অপর আসামি জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাত হোসেন আকন্দের মামলার অংশ উচ্চ আদালত স্থগিত করায় রায় হয়নি।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে ঢাকার আদালতে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অভিযোগপত্র দেন ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। ছয় আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
ছয় আসামি হলেন জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ।
Discussion about this post