নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ৪৮ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। নতুন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় এ রদবদল করলেন। ফলে তদবির করে যারা ভালো থানায় পোস্টিং নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের নবাগত পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে সোনারগাঁয়ে ১৪, রূপগঞ্জে ১৪, ফতুল্লায় ৭, সিদ্ধিরগঞ্জে ১, সদরে ২ এবং বন্দরে ৩ জন আড়াইহাজারে ৭জনকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে জেলার ৭ থানাতেই রদবদল করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় এই ৪৮ জনকে একযোগে বদলি করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম রদবদলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, “দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় কিছু কিছু থানায় অতিরিক্ত অফিসার রয়েছে কিন্তু সে তুলনায় ডিবি, ডিএসবিতে লোক সঙ্কট। তাই থানা থেকে লোক সরিয়ে এনে যেখানে সঙ্কট রয়েছে সেখানকার ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। এই বদলি পুলিশের চলমান প্রক্রিয়া।”
সূত্র জানায়, সোনারগাঁ থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা, আবুল কালাম আজাদ, তাহিদুল্লাহ, রাজু মন্ডল, হাবিব ও আপন কুমার মজুমদার এবং সহকারি উপ-পরিদর্শক নারায়ণ ভৌমিক, নাজমুল হুদা, হাওলাদার ওমর, শাহীন উল্লাহ ও মিজানুর রহমানকে বদলি করা হয়। এছাড়া রূপগঞ্জ থানার ১৪ কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে উপ-পরিদর্শক ৬ জন এবং সহকারি উপ-পরিদর্শক ৭ জন। ফতুল্লাতে ৭ জন, বন্দরে তিন জন, সিদ্ধিরগঞ্জ ১ জন ও সদরে ২জন। এরমধ্যে সদর থানায় এসআই শহীদ এবং সিদ্ধিরগঞ্জে আল আমিন নামে একজন এএসআইকে বদলি করা হয়েছে
সোনারগাঁ থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, “কোনওরকম অভিযোগ নয়, এই বদলি রুটিন মাফিক করা হয়েছে।” ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ মো. আসলাম হোসেন জানান, ৭ জন বদলি করা হয়েছে শুনলেও এ সংক্রান্ত কোনও কাগজ তিনি হাতে পাননি। গত বৃহস্পতিবার তিনি বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছন। বন্দর থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার থানা থেকে তিনজনকে বদলি করা হয়েছে। তবে, তিনি বাইরে থাকার কারণে বদলীকৃত তিনজনের নাম জানাতে পারেননি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ কামরুল ফারুক জানিয়েছেন তার থানা থেকে আল আমিন নামে একজন এএসআইকে বদলি করা হয়েছে। সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বর তাদের থানা থেকে শহীদ নামে একজন এসআইকে বদলি করা হয়েছে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন তার থানা থেকে ১৪ জন এসআই ও এএসআইকে বদলি করা হয়েছে। পুলিশের রুটিন মাফিক এই বদলি বলে তিনি জানিয়েছেন। আড়াইহাজার থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন তার থানাতে কাউকে বদলি করা হয়নি। তবে অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে আড়াইহাজার থানাতেও ৭ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় যোগদানের ৫ দিনের মাথায় পুলিশ সুপার এতো সংখ্যক কর্মকর্তাকে বদলি করায় থানার অন্য কর্মকর্তাদের মাঝে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া একই দিনে এত সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার বদলির ঘটনা নারায়ণগঞ্জে এবারই প্রথম। ফলে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে, এমন বদলি যদি ভালো কিছু হয় সেটি একটি ব্যতিক্রম উদাহরণ হয়ে থাকবে পুলিশ সুপারের জন্য, এমন মন্তব্যও করেছেন কেউ কেউ।
সুত্রঃ ইত্তেফাক
Discussion about this post