
আজ শুক্রবার দুপুরে মামলার প্রধান আসামি সাবেক অধ্যক্ষ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এস এম সিরাজ উদ দৌলার আহম্মদপুর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। আত্মীয়-স্বজনরা বিলাপ করছেন। তার সঙ্গে তার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। বাড়ির লোকজন দাবি করেন সিরাজ উদ দৌলা ছোট বেলা থেকে মেধাবী ছিল। তার নৈতিক চরিত্র নষ্ট হওয়ার কারণে আজকে পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল।ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বাড়িতে কান্নার রোল থামেনি। আত্মীয়-স্বজনরা শান্তনা দিতে বাসা বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। আসামিদের স্বজনদের দাবি এই রায়ে তারা ন্যায় বিচার পাননি। অন্যায়ভাবে তাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ মহান আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছেন। একাধিক আসামির স্বজনরা জানিয়েছেন আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তারা আপিলের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা আশা করেন উচ্চ আদালতে তাদের স্বজনরা ন্যায় বিচার পাবেন।ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নুর উদ্দিনের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নূর উদ্দিনের দিনমজুর বাবা অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। দরিদ্র মা বিলাপ করে করে বুক চেপে কাঁদছেন আত্মীয়-স্বজনরা শান্তনা দিচ্ছেন। তিনি নিজে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পী। কোরা, খাঁছি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। বড় আশা নিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। আল্লাহ তার সকল স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছেন। ফাঁসির দণ্ডাদেশের পরও তিনি তার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।দণ্ডপ্রাপ্ত শাহাদাত হোসেন শামীমর বাড়িতে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে, তার মাকে আত্মীয়-স্বজনরা শান্তনা দিচ্ছে। তার মাও বিলাপ করে কাঁদছে। ফাঁসির দণ্ডাদেশের পরও তার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।পৌর কাউন্সিল মাকসুদ আলমের বাড়ি সোনাগাজী পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের চরগনেশ গ্রামে অবস্থিত। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ফেনী শহরের ভাড়া বাসায় থাকেন।বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ভাই-বোনেরা হাউমাউ করে কাঁদছে। স্বজনরা শান্তনা দিচ্ছে। তার ভাই মাইন উদ্দিন রুবেল জানান, আমার ভাই ৩৬ বছরের আ. লীগের রাজনৈতিক জীবনে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেলেন। আমরা হাইকোর্টে আপিল করব।হাফেজ আব্দুল কাদেরের আহাম্মদপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। বসত ঘরের চার পাশে পাকা দেয়াল। ঘরে বসে মা কাঁদছেন। স্বজনরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন। বড় আশা করে সন্তানকে হাফেজ বানিয়েছিলেন। ছেলের এই করুণ পরিণতির কথা বলে নিজেই বিলাপ করছেন।ইমরান হোসেন ওরফে মামুনের চরগনেশ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মা নেহার বেগম মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছেন। মামা কবির আহাম্মদ ও স্বজনরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন। তারাও হাইকোর্টে আপিল করবেন বলে জানান।মাদরাসা ইংরেজি প্রভাষক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবছার উদ্দিনের পৌর শহরের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা গেছে তার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছেন। আত্মীয়-স্বজনরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন। তিনি জানান, নুসরাত তার ছাত্রী ছিলেন। তার কাছে প্রাইভেট পড়তেন। তাকে অন্যায়ভাবে মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাকে মুক্ত করতে তিনি হাইকোর্টে আপিল করবেন।উপজেলা আ. লীগের সাবেক সভাপতি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত রুহুল আমিনের চরগনেশ গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- তার স্ত্রী, সন্তান পিতা-মাতা ও ভাই-বোনরা থাকেন আমেরিকায়। এক ভাই আমেরিকা প্রবাসী আবুল কাসেম বর্তমানে ছুটিতে দেশে আছেন গত কয়েক মাস। স্বজনরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন। তিনি দাবি করেন বিচারক কোনো আইনে সবাইকে ফাঁসির আদেশ দিলেন আমার বোধগম্য নয়। কারণ সবাইতো সমান অপরাধী নয়। আমার ভাই নির্দোষ ছিলেন। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছিল এবং অন্যয়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে আপিল করলে আমরা ন্যায় বিচার পাব।সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জন আসামিকে ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। একই সঙ্গে সকল আসামির। এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। জরিমানার টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে।গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে নুসরাত জাহান রাফিকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। চার দিন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করার পর ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের পর ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)।
Discussion about this post