বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ হতে চলেছে আগামীকাল রোববার। এই সূর্যগ্রহণকে বলয়গ্রাস গ্রহণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
গ্রহণের সময় আকাশে যখন আগুনের চাকা দেখা যায়, তখন তাকে বলে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ২১ জুন সূর্যকে ঢেকে দেবে চাঁদ। আর চাঁদের আড়াল থেকে সূর্যের যে অংশটি দেখা যাবে, তাকে অনেকটা আগুনের আংটির মতো দেখতে লাগবে।
জানা গেছে, বার্ষিক এই সূর্যগ্রহণ ঢাকার আকাশে দেখা যাবে ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে। ওই সময় থেকে শুরু হয়ে এই সূর্যগ্রহণ চলবে ২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেশি গ্রহণ দেখা যাবে ১টা ১২ মিনিটে। এ সময় প্রায় পুরোটাই চাঁদের আড়ালে থাকবে সূর্য। এই সূর্যগ্রহণের স্থায়িত্ব হবে ৩ ঘণ্টা ২৯ মিনিট। তবে সূর্যগ্রহণের সময় কোনোভাবেই আকাশের দিকে খালি চোখে তাকানো যাবে না।
এই গ্রহণে চাঁদের ছায়া সূর্যের ওপর এমনভাবে পড়বে, যাতে সূর্যের চারপাশের আলোর বলয় দেখা যায়। এই গ্রহণে চাঁদের ছায়া সম্পূর্ণভাবে সূর্যকে গ্রাস করতে পারে না। এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেষ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপ, উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু অংশ থেকে এই সূর্যগ্রহণ স্পষ্ট দেখা যাবে। ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু অংশে এবং কঙ্গো, ইথিওপিয়া, পাকিস্তান এবং চীনেও দেখা যাবে এটি।
কিন্তু কী এই বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ? তার আগে জানতে হবে সূর্যগ্রহণ ঠিক কী?
সূর্যের চারদিকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। আবার পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করে চাঁদ। এভাবে প্রদক্ষিণ করতে করতে যখন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ একই সরলরেখায় আসে, তখন গ্রহণ হয়। যখন চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে একই সরলরেখায় চলে আসে, তখন সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার সময় চাঁদের দ্বারা বাধা পায়। ফলে সূর্যের আলো কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবীতে আসতে পারে না। এই সময়কে সূর্যগ্রহণ বলে।
এই সূর্যগ্রহণ আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে। আংশিক সূর্যগ্রহণ, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ও বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ।
আংশিক সূর্যগ্রহণ: এই ধরনের সূর্যগ্রহণ তখন দেখা যায়, যখন চাঁদের মাধ্যমে সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে বাধা পেলেও একটা অংশের আলোয় শুধুমাত্র বাধা পায়। অর্থাৎ সূর্যের একটা অংশ চাঁদের জন্য ঢাকা পড়ে। বাকি অংশ দেখা যায়। এই আংশিক গ্রহণে সূর্যকে আধ খাওয়া ফলের মতো দেখতে লাগে।
আংশিক সূর্যগ্রহণ:
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ: এই ধরনের সূর্যগ্রহণ তখনই সম্ভব যখন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ সম্পূর্ণভাবে একই সরলরেখায় আসে। সেক্ষেত্রে সূর্যের আলো চাঁদের দ্বারা পুরোপুরি বাধা পায়। ফলে কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলো দেখতেই পাওয়া যায় না। গোটা পৃথিবীতে যেন অন্ধকার নেমে আসে। একেই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলে।
বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ: এই ধরনের সূর্যগ্রহণ তখন দেখা যায়, যখন সূর্যের বহিঃসীমা অঞ্চল ছাড়া বাকি অংশ চাঁদের দ্বারা ঢেকে যায়। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যের শুধু বহিঃসীমাকে দেখা যায়। দেখে মনে হয়, ঠিক যেন একটা আংটি। একে আগুনের বলয়ও বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের সূর্যগ্রহণ সবথেকে কম দেখা যায়। কারণ এই গ্রহণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের সঙ্গে চাঁদের দূরত্ব নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
আগামী কাল অর্থাৎ ২১ জুন এই বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে এই বলয়গ্রাস চলবে। এই কারণেই বলা হচ্ছে, গত ১০০ বছরে এই ধরনের গ্রহণ দেখা যায়নি। কারণ এতক্ষণ ধরে সাধারণত গ্রহণ চলে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সূর্য ফের বেরিয়ে পড়ে।
আগামী কাল এই মহাজাগতিক দৃশ্যের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। করোনা আবহে এই গ্রহণ নতুন কোনও বার্তা আনে কিনা সেদিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।
Discussion about this post