বিএনপিতে সরকারের এজেন্ট ঢুকেছে বলে দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে আমাদের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন এজেন্ট ঢুকে পড়েছে। বিভিন্নভাবে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। বিভিন্ন রকম কথা বলে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। আমি দলের সবাইকে আহ্বান করব, সরকার পতন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার। মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের মধ্যেই দর্শক সারি থেকে একজন উচ্চস্বরে বলে ওঠেন— তৃণমূল ঠিক আছে। কেন্দ্রে ঝামেলা। কেন্দ্র ঠিক করেন। দলের ওই কর্মীকে থামিয়ে দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা সবাই ঠিক আছি, শুধু তৃণমূল না, সবাই ঠিক আছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করে, তারাসহ সকল দেশপ্রেমিক এক আছে। আমাদের দরকার শক্তি সঞ্চয় করে সঠিক সময় সঠিক জায়গায় আঘাত করা। সেই আঘাতের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল রবিবার রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অবিলম্বে নতুন নির্বাচন না দিলে সরকারকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সরকারপ্রধানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, সময় নেই। অবিলম্বে এ পার্লামেন্ট বাতিল করুন, পার্লামেন্ট বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেটা আগে ছিল, সেটি গঠন করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবিলম্বে নির্বাচন দিন। অন্যথা জনগণের আন্দোলন আপনাকে ফেস করতে হবে। তখন আর আপনি কোনো সময় পাবেন না।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সময় নেই। আপনারা দেওয়ালের লিখন পড়ছেন, মানুষের চোখের ভাষা পড়ছেন। অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করুন এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে— কেয়ারটেকার সরকার যেটা আগে ছিল, সেটা ফিরিয়ে এনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিন। অথবা জনগণের যে ভাষা আছে, সেটা শিখে নিয়ে জনগণের আন্দোলনকে ফেস করতে হবে। তখন আর কোনো সময় আপনারা পাবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি ভারতের এনআরসিতে বাংলাদেশ সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত, তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। কারণ, এখানে আমাদের স্বার্থ আছে। বার বার বলা হচ্ছে, বাংলাদেশিরা বেআইনিভাবে ভারতে অনু্প্রবেশ করেছে; এটা মারাত্মক কথা। এনআরসি থেকে বাদ পড়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয় হবে না— ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিভাজন দেখেন, বৈষম্য দেখেন। আপনি ভিসা নিয়ে যাবেন ইন্ডিয়াতে, ভিসা শেষ হয়ে গেল, আপনার একদিন দেরি হলো, আপনাকে দিতে হবে ২১ হাজার টাকা ফাইন। আর আমাদের নিতাই দাদা বা গয়েশ্বর দাদা যদি একদিন দেরি করেন তাহলে ১০০ টাকা। সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িকতা। আমরা চিন্তাও করতে পারি না যে, ভারতের মতো দেশে এই ধরনের একটা সাম্প্রদায়িকতা শুরু হবে। যা সম্পূর্ণভাবে বিভাজন সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের মানুষ এভাবে চিন্তাও করতে পারে না।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, সেলিমা রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু প্রমুখ।
Discussion about this post