কয়েক মাস পর আবার ময়মনসিংহের নতুন বিভাগীয় শহর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে বসতভিটা রক্ষা করেই নতুন বিভাগীয় শহর হবে খাস জমিতে। এ নিয়ে গতকাল শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার জয়বাংলা বাজারে অধিগ্রহণকৃত এলাকার মানুষের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান এলাকাবাসীকে আশার আলো দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, এবার নতুন শহরের জন্য দু’টি প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে দু’টি জমি অধিগ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অধিগ্রহণকৃত বেশির ভাগ জমিই হতে পারে খাস জমি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করা হলেও মানুষের বসতবাড়ি যাতে রক্ষা হয় সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। ইউএনও জানান, টেমস নদীর দুই পাশে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা লন্ডন শহরের আদলে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই তীরে হবে ময়মনসিংহের বিভাগীয় নতুন শহর।
চার বছর আগে ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর বিভাগীয় প্রশাসন আধুনিক নগরী গড়ার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ নগরীর ওপারে ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমি অধিগ্রহণের সিন্ধান্ত নেয়। ওই জমির মধ্যে অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, মসজিদ-মাদরাসা ও কবরস্থান থাকায় এলাকাবাসী নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। দুই বছরের বেশি সময় আন্দোলনের পর সরকার ওই জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। সরকারিভাবে ওই প্রকল্প বাতিল করার পর আবারো নতুনভাবে জমি অধিগ্রহণ করে নতুন শহর ও বিভাগীয় কার্যালয়গুলো করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
চরাঞ্চচলের বসতভিটা রক্ষার আন্দোলনের সাথে জড়িতরা জানান, নতুন প্রকল্প নিয়ে বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আন্দোলনকারী কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে চরাঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দাদের সাথে ইউএনও কথা বলবেন বলে সিন্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক গতকাল বিকেলে জয়বাংলা বাজারে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ইউএনও বলেন, নতুন করে ৯৫০ একর ও দুই হাজার ৯৮৩ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ৯৫০ একর জমির বেশির ভাগই খাস জমি। ওই জমি অধিগ্রহণ করা হলে মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। বাতিল হওয়া সাড়ে চার হাজার একর জমির প্রকল্পে চর এলাকার ছয় থেকে সাতটি গ্রাম ছিল। নতুন যে প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে সেখানে রয়েছে তিনটি গ্রাম। গ্রামগুলো হচ্ছেÑ চর জেলখানা, গোবিন্দাপুর ও পাড়া লক্ষ্মীর আলগী।
ইউএনও আরো বলেন, ৯৫০ একর জমি প্রাথমিক পরিকল্পনায় থাকলেও পাশাপাশি দুই হাজার ৯৮৩ একর জমি নিয়েও একটি পরিকল্পনা আছে। সে জন্য ওই এলাকায় একটি জরিপ চালাতে হতে পারে। ইউএনওর এ বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সমাবেশে উপস্থিত বাসিন্দারা জানান, ৯৫০ একর জমির বাইরে অন্য কোনো জমিতে জরিপ চালানোর পক্ষে তারা নন। এরপর ইউএনও বলেন, যা কিছু হবে তা আপনাদের সাথে কথা বলেই সিন্ধান্ত নেয়া হবে। অধিগ্রহণ হলে জমির দাম প্রকাশ্যে দেয়া হবে। কেউ ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না।
সমাবেশে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন, বসতভিটা রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু বক্তব্য রাখেন। তারা চরাঞ্চলবাসীর পক্ষে ইউএনওকে অনুরোধ করেন, অধিগ্রহণে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
Discussion about this post