বাংলাদেশ বেতারের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে কমপক্ষে ১০ হাজার চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের গ্রন্থনা উপস্থাপনা করে পরিচিত তাঁর কণ্ঠটি, দেশবাসীর বেশিরভাগ তার কণ্ঠ শুনে শুনে বড় হয়েছেন। ৭২ বছর বয়সেও তার স্মৃতি সতেজ। তিনি বিনোদন বন্ধু মাজহারুল ইসলাম।
বুধবার কালের কণ্ঠ লাইভে এসে তিনি বলছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার সম্পৃক্তির স্মৃতি, স্বাধীনতার পর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সামনে ওয়্যারলেস বার্তার বাংলা অনুবাদ পাঠের স্মৃতি। তিনি দাবি জানালেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যুক্ত নিবেদিত সেই সব শিল্পী কর্মীদের যথযথ মুল্যায়ন করতে হবে।
কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক পার্থ সারথি দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঠিক ইতিহাস আজ ও আগামী প্রজন্মের জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জলন্ত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মাজহারুল ইসলাম ‘বিক্ষুদ্ধ বাংলা’ সংগীতালেখ্যে ধারা বর্ননা করেছেন। এটি সম্প্রচার হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট। এটির রচনায় ও প্রযোজনায় ছিলেন চিত্র পরিচালক দিলীপ সোম।
একাত্তরের জুনে আগরতলা যাবার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। তখন একজন ব্যক্তির সহযোগিতায় মৃত্যুমুখ থেকে বেঁচে বিভিন্ন পথ ধরে আগরতলা গেলেন। কুমিল্লার চান্দিনা থেকে জাফরগঞ্জ বাজার থেকে বিশালগড় হয়ে আগরতলায় যান। সেখান থেকে ধর্মনগর রেলস্টেশন থেকে লামডিং হয়ে মেঘালয় হয়ে বিহার পাড়ি দিয়ে তিন-চার দিনে কলকাতার হাওড়া রেলস্টেশনে পৌঁছান। তখন তার শরীরে প্রচন্ড জ্বর। জ্বর নিয়ে থিয়েটার রোডে পরিচিত কাউকে না পেয়ে গড়ের মাঠে শরনার্থীদের সঙ্গে রাত কাটিয়ে পরদিন প্রিন্সিপ স্ট্রিটে একটি বাড়িতে বাংলাদেশের কিছু শিল্পীর খোঁজ পান।
সেখানেও তেমন কোনো পরিচিত শিল্পীকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পায়ে হাঁটা শুরু করেন। হঠাৎ পরিচিত মানুষ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক আশফাকুর রহমানের সঙ্গে দেখা হলে পরে তার মাধ্যমে ওই বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা জেনে সেখানে উপস্থিত হন। মাজহারুল ইসলাম ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ঢাকার সুগন্ধা রেস্ট হাউসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে বঙ্গবন্ধুর ২৫ মার্চ রাতে পাঠানো ওয়ারলেস বার্তার বাংলা অনুবাদ পাঠ করেন শোনান মাজহারুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠের অনুকরণে তিনি তা পাঠ করেন। তখন বঙ্গবন্ধু তা মন দিয়ে শোনেন ও প্রশান্তির হাসি হাসেন।
তিনি জানান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের নির্বাচিত অংশ সম্প্রচার করা হতো। এটির নাম ছিল ‘বজ্রকণ্ঠ’। স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশ বেতারের সব কেন্দ্র থেকে বজ্রকণ্ঠ সম্প্রচার করা হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাত পর্যন্ত। এটির উপস্থাপন করতেন মাজহারুল ইসলাম। মাজহারুল ইসলাম বেতারের ৩০০ নাটকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে নায়ক হিসেবে তার অভিনয় শুরু হয়েছিল।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
Discussion about this post