পরিবারের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বিয়ের তিন মাসের মাথায় সৌদি আরব যান হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হুসনা আক্তার (২৪)। বাসা-বাড়ির বুয়ার কাজ করতে হবে, কাজের জন্য মাসে ২২ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জেনেছিলেন তিনি।
কিন্তু বিদেশে পাড়ি দিয়েই তার স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। নির্যাতনের শিকার হুসনা প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানান তার স্বামীর কাছে। কিন্তু স্বামী এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। স্বামী চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে স্ত্রীর মুক্তির আকুতির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন।
অবশেষে সৌদি আরবের নাজরান এলাকা থেকে উদ্ধার করে হুসনাকে হেফাজতে রেখেছে সে দেশের পুলিশ। তাকে দেশে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের জেদ্দা কনস্যুলেটের শ্রম উইং।
হুসনার পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য সৌদি আরব যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হুসনা। বিয়ের তিন মাসের মাথায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
হবিগঞ্জের শাহিন নামে এক দালালের সহযোগিতায় ‘আরব ওর্য়াল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে গত ৭ নভেম্বর গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব পৌঁছান হুসনা।
এজেন্সি থেকে বলা হয়, বাসা বাড়ির কাজ করতে হবে এবং মাসে ২২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। তবে অতিরিক্ত কাজের চাপে এবং গৃহকর্তার নির্যাতনে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই নারী।
সৌদি আরব পৌঁছানোর এক সপ্তাহ পরই সেখানে নির্যাতনের কথা স্বামী শফিউল্লাহকে জানান। শফিউল্লাহ তাকে ফিরে আসতে বলেন। এরপর হুসনা সৌদি আরবে ওই এজেন্সির অফিসে ফোন করেন। কিন্তু সৌদি আরবের এজেন্সির লোকজন তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং গালাগালি করে। দুই বছরের মধ্যে তাকে দেশে পাঠানো যাবে না বলে জানিয়ে দেয় তারা।
শফিউল্লাহ জানান, ‘কোনও উপায় না দেখে আমি দালাল শাহিনকে ফোন করে সব জানাই। আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলি শাহিনকে। কিন্তু শাহিন দুই লাখ টাকা দাবি করে।’
শফিউল্লাহ বলেন, পরে ঢাকায় আরব ওর্য়াল্ড ডিস্ট্রিবিউশনের অফিসে সরাসরি গিয়ে কথা বলি। শাহিন দুই লাখ টাকা চাইছে সেটাও জানাই। কিন্তু সেখানেও কোনও লাভ হয়নি।
ওই এজেন্সির কর্তব্যরতরা শফিউল্লাহকে বলেন, দুই বছরের জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে। এর আগে আনা যাবে না। এর আগে দেশে আনতে হলে এক লাখ টাকা এজেন্সিকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আসলে এজেন্সির লোকজন তাকে আসতে দিচ্ছে না। তারা আমার স্ত্রীকে গালাগালি করেছে। আমার স্ত্রী বলেছে, যেখানে কাজ করে সেখান থেকে এজেন্সিতে গেলে এজেন্সির লোকজন গায়ে হাত তোলে, মারাত্মক নির্যাতন করে। এখন মনে হচ্ছে সৌদি পাঠানোই ভুল হয়েছে।
এদিকে যে ভিডিও শফিউল্লাহ ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন, তাতে দেখা যায় হুসনা বলছেন, ‘আমি মোছা. হুসনা আক্তার। আমার দালালে ভালা কথা কইয়া আমারে পাঠাইছে সৌদি। নিজরাল (নাজরান) এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। ওরা আমার ওপর অত্যাচার করে। আমি বাক্কা দিন (১০/১২ দিন) হইছে আছি। এখন এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা। এই কথা বলায় ওরা আরও বেশি অত্যাচার করে। আমি এজেন্সির অফিসে ফোন দিছি। অফিসের এরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে ভাবো পারো আমারে বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না। এরা আমারে ইতা করতাছে। আমারে ভালা কামের (কাজের) কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমারে ইতা করতাছে ওরা। আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাঈমা খন্দকার জানান, বিষয়টি শোনার পর তার স্বামীর সঙ্গে আলাপ করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেওয়ায় সৌদি আরবের পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে। হুসনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
Discussion about this post